মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২
মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২

‘জুলাই বিপ্লবের টার্গেট অর্জনে মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস জোরদার করতে হবে’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক জাফর সাদেক বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। জুলাই বিপ্লবের স্লোগান হচ্ছে একটি বৈষম্যহীন ইনসাফ ভিত্তিক ও জবাবদিহীমূলক বাংলাদেশ গঠন করা; যেখানে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, স্বজনপ্রীতি চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজি থাকবে না। সরকার ইতোমধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরি করেছে। দেশের একটি বৃহৎ দল হিসেবে জামায়াত জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনীনহ তাদের পরামর্শ সরকারের নিকট উপস্থাপন করেছে। তাই জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়া এবং জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। জুলাই সনদকে আইনী ভিত্তি দেয়া ছাড়া নির্বাচন হলে তা হবে ফ্যাসিবাদকে পূনর্বাসন করার নির্বাচন। জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি হলো রাজনৈতিক দলসমূহ ও অন্তবর্তী সরকারের জনগণের কাছে একটি কমিন্টমেন্ট ও অঙ্গীকার এবং নির্বাচনের পূর্বেই এই কমিন্টমেন্টে আসতে হবে যে, আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ চাই। তিনি বলেন, দুইটি পদ্ধতিতে সমস্যা সমাধান করা যায়, একটি হলো সংবিধানিক আদেশ ও গণভোট। জুলাই সনদ যদি আইনী প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত হয়ে না আসে তাহলে এটি স্টেট এভিডেন্স হিসেবে স্বীকৃতি পাবে না।

রবিবার (০৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ ইসলামী একাডেমি (বিআইএ) মিলনায়তনে চট্টগ্রাম মহানগরীর জামায়াতের উদ্যােগে ৫দফা গণদাবী আদায়ের লক্ষ্যে সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমীর পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার ও মোহাম্মদ উল্লাহ সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারির অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, সাংবাদিক এ কেএম জহুরুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক নুরুল মোস্তফা কাজী, সাংবাদিক আবুল হাসনাত, সাংবাদিক নেতা গোলাম মাওলা মুরাদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম মোস্তফা, এনামুল হক, কবি আব্দুল গফুর প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্য মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ২০০৬ সালের লগি-বৈঠা তাণ্ডবের ফসল ১/১১ অসাংবিধানিক সরকারের ২০০৮ সালের ডিজিটাল কারচুপির অস্বাভাবিক পরিসংখানের নির্বাচন দিয়ে শুরু ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমল। ২০১৪ ভোটারবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালের নিশিরাতের নির্বাচনে সহযোগী জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোট। ২০২৪ এর নাটকীয় আমি-ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ তুঙ্গে। গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বিচারিক হত্যাযজ্ঞের ধারাবাহিকতায় রক্তের হোলি খেলা আর বিরোধী কণ্ঠ শূন্য রাজনীতি তখন বাংলাদেশের পরিচয়। তিনি বলেন, নিপীড়নের মধ্যেই গণতন্ত্রমনা মানুষের মনোজগতে আসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন, জন্ম নিয়েছিল এক সাংস্কৃতিক জাগরণের। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের বৈপ্লবিক চেতনা ছিলো অদম্য। দেয়াল লিখন-গ্রাফিতি, স্যাটায়ার কার্টুন ফিরে এসেছিল নতুন রূপে প্রতিবাদী কণ্ঠে। প্রিন্ট মিডিয়ার ঘাটতি পূরণে পুনর্জন্ম হয়েছিল সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুক-টুইটার-ইনস্টাগ্রাম। স্লোগানে- স্লোগানে ছড়িয়েছিল বিপ্লবের নতুন বার্তা। “কোটা না মেধা? মেধা, মেধা!” দিয়ে শুরু। নয় দফা রক্তাক্ত হয়ে এক দফা-ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন। রাজপথে ও অনলাইনে সমান তালে চলেছে আন্দোলন। “আপস না সংগ্রাম? সংগ্রাম, সংগ্রাম!”, “দালালি না রাজপথ? রাজপথ, রাজপথ!”, “আসছে ফাগুন, আমরা হব দ্বিগুণ !”— এগুলো শুধু নয় শ্লোগান, ছিল বিপ্লবের আগুন।

তিনি আরও বলেন, চব্বিশের জুলাই অভূতপূর্ব এক গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক জাগরণের সাক্ষী। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার আন্দোলনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি অনন্য ভূমিকা রেখেছেন শিল্পী, কার্টুনিস্ট, মিডিয়া কর্মী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। ‘এডিটরস গিল্ড’ নামের ফ্যাসিবাদের দালাল সাংবাদিক গোষ্ঠী এবং ‘আলো আসবেই’ ব্যানারে স্বৈরাচারের দোসর সংস্কৃতি কর্মীরা হার মানতে বাধ্য হয়েছিল অবশেষে। ১৪ জুলাই শেখ হাসিনার বিদ্রুপাত্মক মন্তব্যের জবাবে “তুমি কে, আমি কে? রাজাকার, রাজাকার! কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার!” শ্লোগান ছিলো তীব্র প্রতিরোধের সাংস্কৃতিক অস্ত্র। জুলাই আন্দোলন এগিয়েছে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে। ১৬ তারিখে রংপুরের আবু সাঈদ, চট্টগ্রামের ফয়সল শান্ত, ওয়াসিম ও ফারুক এবং ঢাকার সুজন ও শাহজাহানের শাহাদাতের পর ১৯ তারিখের কারফিউ, ডিবি’র দপ্তর থেকে সরকারপ্রণীত বিবৃতি, একদিকে আন্দোলনকে কিছুটা শ্লথ করলেও জুলাই যোদ্ধা সমন্বয়কদের ঐকান্তিক প্রতিজ্ঞা ও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আন্দোলনকে আবার জ্বালিয়ে তোলে। তখন দেশের রাজপথে, অলিগলিতে, ভার্চুয়াল জগতে— সবখানে উচ্চারিত হতে থাকে একটিই অদম্য দাবি ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন। অবশেষে সফলতার দিন আসে ৩৬ জুলাই। কিন্তু জুলাই সনদ, স্বৈরাচারের দোসরদের রাজনীতি নিষিদ্ধ, লুটেরা ও খুনিদের দৃশ্যমান বিচার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে পিআর সিস্টেমে জাতীয় নির্বাচন ছাড়া লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব। এখনো সকলকে থাকতে হবে আন্দোলনে সোচ্চার।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, নগর জামায়াতে এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম ৯ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডা. এ কে এম ফজলুল হক, নগর কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, হামেদ হাসান ইলাহী, প্রফেসর মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, আমির হোছাইন প্রমুখ।

প্রধান খবর

নির্বাচিত খবর