বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

প্রজন্ম ভাবনায় জিয়াউর রহমান: ব্যতিক্রমী দেশপ্রেমিক শহীদ জিয়া ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ

­­কাজী জাহাঙ্গীর, প্রিয় চট্টগ্রাম: স্কুল জীবনে আমরা এই ভাবসম্প্রসারণটা কমবেশী সবাই পড়ে এসেছি-‘জন্ম হউক যথা তথা কর্ম হউক ভাল’। জন্ম যেখানেই হউক না কেন কর্মগুনেই মানুষ সমাজে তার অবস্থান করে নেবে এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না। পিছনে শত সমালোচনা থাকলেও অবদান অবদানই,ইতিহাসের বুক চিড়ে একদিন সেই অবদানের স্বীকৃতি বেরিয়ে আসতে বাধ্য। বড় বড় বিশ্বনেতাদের জীবনাচরণ, কর্মজীবন আর সমাজ রাষ্ট্রে তাদের অবদান সর্ম্প্ণূ বিপরীত মেরুতে।
আমরা যদি আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন এর কথা আলোচনায় আনি তাহলেও আমাদের বিষ্ময়ের সীমা থাকে না। পৃথিবীর সেরা ভাষনগুলোর অন্যতম সেরা ভাষন বলে পরিচিত আব্রাহাম লিংকনের ‘গেটিসবার্গ এড্রেস’, মাত্র ৩/৪মিনিটের একটা ভাষন কিভাবে আব্রাহাম লিংকনকে সেরা বক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে সেটা এখন শুধুই ইতিহাস। আরো মজার বিষয় হলো ষোলতম প্রেসিডেন্ট হিসাবে আব্রাহাম লিংকনই আমেরিকা থেকে দাসপ্রথা বিলুপ্ত করেছেন যার জন্য ‍তিনি সভ্য আমেরিকান সমাজে চিরনমস্য ব্যক্তিত্ব হয়ে আছেন। তাহলে পূর্বের পনের জন প্রেসিডেন্ট বা আমেরিকার জনক জর্জ ওয়াসিংটন তিনি কি নমস্য বা সন্মানিত নন ? এই প্রশ্নটা আসলে একটা অবান্তর প্রশ্ন।
আর ওয়াসিংটন এর কথাও যদি বলেন তিনিও কিন্তু নিরেট রাজনিতীবীদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন বৃটিশ উপনিবেশের একজন সামরিক কর্মকর্তা যার পারিবার জড়িত ছিলেন দাস ব্যবসার সাথে অথচ সেই তিনিই শেষ পয্যন্ত আমেরিকার জনক হয়ে গেলেন। দাস প্রথা বিলুপ্ত করে যে কৃতিত্ব লিংকন নিয়েছেন তিনি(জ.ওয়াসিংটন) প্রথম প্রেসিডেন্ট হয়েও সেটা নিতে না পারলেও তার গনতন্ত্র মনস্কতা অনন্যসাধারণ ছিল। যুদ্ধে জয়লাভ করেও তিনি ক্ষমতা দখল করেননি, সর্বাধিনায়ক থেকে পদত্যাগ করে মার্কিন গনতন্ত্র প্রণয়নে অঙ্গিকার করেন এবং পরবর্তীতে ইলেকটোরাল কলেজ থেকে সর্বসম্মতভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। অথচ তিনি ক্যান্টনমেন্ট থেকেই বেরিয়ে এলেন, কোন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে নয়। আর আমেরিকার জনক হয়েও তিনি কিন্তু দুই বারের বেশী ক্ষমতায় থাকেননি যদিও তখনও এক রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ দুবার থাকার নিয়মটাই প্রতিষ্টিত হয়নি। এতো গেল সেকালের কথা, কিন্তু একালের বর্ণবাদ উত্তর দঃ আফ্রিকার কথাও যদি আমরা আলোচনায় আনি তাহলেও দেখতে পাবো ‘নেলসন মান্ডেলা’ নামের একটা উজ্জ্বল নক্ষত্র পৃথিবীর অর্বিটালে আলো ছড়িয়ে কিংবদন্তি হয়ে গেলেন। এই নেতার পুরো যৈাবনই কেটে গেল বর্ণবাদের অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠে। দীর্ঘ ২৭বছরের বন্দি জীবন থেকে মুক্ত হয়ে যখন তার নেতৃত্বে এ-এন-সি ক্ষমতার মুখ দেখলো তখনও মান্ডেলাই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যার কথায় পুরো দঃ আফ্রিকা উঠ-বস করতো। সেই মান্ডেলাও কিন্তু মাত্র দুবার প্রেসিডেন্ট থেকে দলকে সুসংগঠিত করে উত্তরসূরীদের কাছে নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে জীবদ্দশাতেই জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে গেলেন। শুধু তাই নয় বন্দি দশা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য অনেক অবদান রাখা নিজ স্ত্রীর বিরুদ্ধে ‍যখন দুর্নীতির অভিযোগ এল সে স্ত্রীকে ত্যাগ করতেও তিনি কুন্ঠাবোধ করেননি। যাদের কথা আলোচনা করলাম ইচ্ছে করলে তারাও আমৃত্যু ক্ষমতা আকড়ে ধরে থাকতে পারতেন কারণ তাদের সেরকমই প্রভাব ছিল জাতির উপর। কিন্তু তারা নিজেদেরকে কেউ আজীবন প্রেসিডেন্ট বা রাজা হিসাবে ঘোষনা করেননি। বরং উত্তরসূরীদেরকে গনতন্ত্রের জন্য দীক্ষা দিয়েছেন। দেশের জন্য রাখা অবদানের বদলে বাড়তি সুবিধা ভোগ করার বিপরীতে দেশের উন্নয়নে আত্মত্যাগের চরম পরাকাষ্টা দেখিয়েছেন।
এসব কথা অনেকর কাছেই অতিকথন বলে মনে হবে আমাদের, কেননা আমাদের রক্তে যেন জন্ম থেকেই ক্ষমতার লিপ্সা কনিকার স্রোতে বাসা বেধে গেছে। তার ব্যতিক্রম দেখিয়েছেন শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। জর্জ ওয়াশিংটনের মত তিনিও প্রগাঢ় দেশপ্রেম নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন ক্যান্টনমেন্ট থেকে। এসেছিলেন অত্যন্ত সুশৃংখল এবং গভীদেশপ্রেমে আরক্ত জীবন থেকে। সেনাবাহিনীতে থেকেও স্বাধীনতাপূর্ব পরিস্থিতিগুলো পর‌যবেক্ষণ করেছেন কানখাড়া সতর্কতায়। আর নিজের কর্মক্ষেত্রের সীমাবদ্ধতার মাঝে থেকেও অন্যান্য বাঙালী অফিসার আর সৈনিকদের মাঝে সঞ্চার করে তুলেছেন দেশপ্রেমের ভাবাবেগ, আর সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন ‘উই রিভোল্ট’ বলে বেরিয়ে আসার সেই মাহেন্দ্রক্ষনের জন্য। শেষ পয্যন্ত সেই সৌভাগ্যও তার হয়েছিল। মুক্তির আকাঙ্খায় টগবগিয়ে ফোটা রক্তের উদ্দীপনায় হানাদার জানজুয়া’র সমস্ত পরিকল্পনাকে নসাৎ করে বেরিয়ে এসে কালুরঘাটে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। সেদিনের সেই পরিস্থিতি দেশপ্রেমের নেশার আকন্ঠ নিমজ্জিত একজন মেজরকে সাহস জুগিয়েছে দৃঢ় কন্ঠে উচ্চারণ করার ‘ আমি মেজর জিয়া বলছি, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করছি’ -এটাই ছিল জিয়ার সততার এক শ্রেষ্ঠ পরাকাষ্টা । তিনি অনুধাবন করেছিলেন যে তিনি কোন রাজনৈতিক ব্যাক্তি ছিলেন না, তাই তিনি নেতৃবৃন্ধের সাথে যোগাযোগ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন এবং যিনি সম্মান পাবার, তার সম্মান তাকে দিতে তিনি এতটুকু কুন্ঠাবোধ করেননি। তার পরের সবকিছুই এখন ইতিহাস হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহন করে পরপর দুইটা সেক্টরের সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নেতৃত্বেই গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিবাহিনীর প্রথম সামরিক বিগ্রেড ‘জেড ফোর্স’। যে বাহিনী সম্মুখ সমরে অনেক কৃতিত্ব দেখিয়েছে এবং শেষ পয্যন্ত তিনি তার বীরত্বের জন্য ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভুষিত হয়েছেন। এটাও অস্বীকার করার কোন উপায় নাই যে, মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তিনি অন্যান্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন। তিনি একাধারে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, স্বাধীনতার ঘোষনার সাথে সম্পৃক্ত সেনা নায়ক, মুক্তিবাহিনীর প্রথম সামরিক বিগ্রেডের প্রধান এবং তৎকালীন সেনাবাহিনীর অত্যন্ত জনপ্রিয়, চৌকষ জেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা।
এতকিছুর পরও জিয়া স্বাধীন দেশে তার কর্মস্থলেই ফিরে গেছেন একবুক বঞ্চনা নিয়ে। তবুও দেশপ্রেম এবং নিজের সততার প্রতি তার দৃঢ়তাই তাকে আবার জনগনের সামনে আসার আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রক্ষেপন করেছে। ৭ই নভেম্বরের সেই বিদ্রোহ-বিপ্লবের পূর্ব মুহুর্ত পয্যন্ত যে জিয়া বন্দি দশায় প্রতিনিয়ত মৃত্যুর হাতছানি দেখতে পাচ্ছিলেন, মুক্ত হয়ে সেই জিয়া’ই আবার দুর্নীতি,দুঃশাসনে জর্জরিত আপামর জনগনের গনতন্ত্রাকাঙ্খার অনির্বাণ শিখা হয়ে আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পয্যন্ত। একদলীয় শাসনের বিপরীতে বহুদলীয় গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলো, জনগনের ভোটের অধিকার ফিরে এলো, সংবাদপত্র সমুহ মুক্ত হলো, জনগনের বাক-স্বাধীনতা ফিরে এলো, উৎপাদনের রাজনীতিতে দেশ খাদ্যে স্বয়ং-সর্ম্প্ণু হলো, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তাই জিয়ার নাম ছড়িয়ে পড়ল দ্রুত । আর তার এসব সফলতার ইতিহাসই বিরুদ্ধবাদীদের গলার কাঁটা হয়ে প্রকাশ পেল। তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার প্রপাগান্ডা না করে জনগনের কাছে তুলে ধরার মত তাদের হাতে আর কিছুই রইল না ‘একজন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু’ ছাড়া যার সাথে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী কোন নেতা-কর্মীদের নুন্যতম কোন বিরোধ নেই। তবুও জিয়ার বিরুদ্ধবাদীরা গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যাচার করাকেই যেন তাদের পাথেয় হিসাবে বেছে নিয়েছেন। সেনা ছাউনিতে জন্ম, বাইচন্স মুক্তিযোদ্ধা, ধর্মব্যবসায়ী সহ হেন কোন অপবাদ চাপাতে তারা দ্বিধাবোধ করেননি। কারন একটাই ু তাদের অন্তঃসার শুন্য, ক্ষমতালিপ্সু, প্রতিহিংসাপরায়ন এবং একনায়কসুলভ মানসিকতার বিপরীতে শহিদ জিয়ার সততা, নির্মোহ দেশপ্রেম, তার দেয়া আমাদের বিশ্ব পরিচয় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এবং উন্নয়নের ১৯দফা আদর্শ নতুন প্রজন্মের মাঝেও এমনভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে দেখে, তারা আর নিজেদেরকে কিছুতেই সংবরণ করতে পারছেননা।
নতুন প্রজন্মও বুঝে গেছে এই মিথ্যুকদের প্ররোচনায় প্ররোচিত না হয়ে সত্যিকারের ব্যতিক্রমী দেশপ্রেমী শহিদ জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদা আর তার আদর্শে লালিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বি এন পি’ ই বাংলাদেশের উত্তর প্রজন্মের ঠিকানা হবে। এটাই যেন শেষ কথা।