ডা: চিত্তরঞ্জন শর্মা:
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতা, পিতা, ভাই—বোন প্রায় সকলেই সাংস্কৃতিক গুণসম্পন্ন ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শৈশব কাল থেকে সাহিত্য চর্চা করেছেন। শিশু, নারী, পুরুষ, আবাল, বৃদ্ধ, বণিতাদের জন্য ও ধর্মপরায়ণ মানব সমাজের জন্য ছড়া, কবিতা, নাটক, কাব্য, প্রবন্ধ ইত্যাদি রচনা করেছেন। তিনি প্রকৃতি ও মানুষের মাঝে যে সম্পর্ক ও মানব মনের মনস্তাত্ত্বিক অন্তর্দ্বন্ধ সম্পর্ক ও সামাজিক নানা সংস্কার সম্পর্কে অতি সুন্দর করে লিখেছেন। তিনি রোমান্টিক গল্প যেমন লিখেছেন তেমনি ট্রাজেডি নিয়েও লিখেছেন। তিনি অনেক সূক্ষাতিসূক্ষ বিষয় সমূহকে তাঁর বিভিন্ন গল্পের মধ্যে স্থান দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ আধুনিক ধ্যানধারণার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তাঁর পারিবারিক জমিদারীর বিভিন্ন অংশে ঘুরে জনগণের সঙ্গে মিশে গরীবের অবস্থা তাঁর গল্পের উপাদান সংগ্রহ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে নাটক ও চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। “স্ত্রীর পত্র” গল্পটি বাংলা সাহিত্যের নারী স্বাধীনতার পক্ষে সাহসী পদক্ষেপ বলা যায়। হিন্দু বিবাহ সংস্কার ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অন্যায় ভন্ডামী কে হৈমন্তী গল্পে রবীন্দ্রনাথ আঘাত করেছেন। তিনি বিবাহিত বাঙালি রমনীর জীবন স্মৃতিময় অবস্থাটি মানুষ যে প্রকৃতির একটি অংশ এবং প্রগতি ও বিশেষ বিশেষ রূপ গুলো একাকার উহা তিনি তার গল্পে দেখিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ উনার গল্পের ভিতরে নিজেকে প্রবেশ করেননি। তবে দুই একটি গল্প যেমন কাবুলিওয়ালা, পোস্টমাস্টার ইত্যাদিতে তাঁর সমপৃক্ততা দেখায় যায় তাঁর ছোট গল্প সমূহে তিনি অনুপস্থিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বকবি শুধু আলংকারিক অর্থে নয় প্রকৃতই তিনি। পুরান বেদ ও উপনিষদ তার কৈশোর জীবনের অবগাহন। প্রাচীন ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা অনুস্মরণ করে তিনি বোলপুরে গড়ে তোলেন শান্তিনিকেতন, ব্রহ্মর্চযাশ্রম। ছোট বেলাতে তাঁর ইংরেজি ও সংস্কৃত শিক্ষা চললেও নিজ বাড়িতে মেজদা হেমেন্দ্রনাথের নিকট বাংলা ভাষা শিখতে হতো। বাড়িতে বই এর বাগান ছিল। বিভিন্ন পত্র পত্রিকা তাঁকে প্রজ্ঞা হতে সাহায্য করেছে। যে সময় দেশে ইংরেজি পড়ার ঘুম পড়ে গিয়েছিল সেই সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িতে অফুরন্ত পুস্তক সম্ভার। বাংলা পত্র পত্রিকার মাধ্যমে এবং ঠাকুরবাড়ি হতে প্রকাশিত হতো বিভিন্ন পত্রিকা যেমন তত্ত্ববোধনী, ভারতী ও বালক। তিনি মঙ্গলকাব্য, কাশীরাম দাস, কৃত্তিবাস, রামপ্রসাদ, হরু ঠাকুরের পাঁচালী ইত্যাদি সমাপ্ত করেছিলেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কার পান। গীতাঞ্জলী হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি কাব্যগ্রন্থ। ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথের সং অফারিংস কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এতে গীতাঞ্জলী ও সমসাময়িক আরও কয়েকটি কাব্যগ্রন্থের কবিতা রবীন্দ্রনাথ নিজে অনুবাদ করে প্রকাশ করেন। ১৯১৩ সালে ইংরেজি কাব্যগ্রন্থটির জন্য রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলী রচনা করে বাঙালি ও বাংলা ভাষার মান বিশ্বের দরবারে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি প্রথম বাঙালি নোবেল বিজয়ী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়িকতার ভেদাভেদ ছিল না। তিনি বিশ্বভারতীতে উদার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম, মোঃ শহিদুল্লাহ, আলাউদ্দিন খাঁ কে তাছাড়া বহু কবি সাহিত্যিক ও প্রবন্ধকারদের তিনি সম্মান করতেন। আমি বিদেহী আত্মার সদগতি কামনা করছি।
লেখক, চিকিৎসক ও প্রাবন্ধিক।
