মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ

শফিউল আলম, নিজস্ব প্রতিনিধি, রাউজান :প্রচণ্ড বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় মা মাছ। উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করে নদীর দু”পাড়ে ডিম সংগ্রহকারীরা।বৃহস্পতিবার(২৯ মে) ভোর রাত ২টার দিকে নদীতে ডিম ছাড়তে শুরু করেছে মা মাছ। রাত ২টার দিকে জোয়ারের সময় হালদা নদীর আমতুয়া অংশে কার্পজাতীয় মা মাছ পূরোদমে ডিম ছাড়ে।পরবর্তীতে ডিমগুলো হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকতা আলমগীর হোসেন।
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে থেকে নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়া পর শুক্রবার হালদার রাউজান উপজেলার মদুনাঘাট চইল্যাখালী, কাগতিয়ার আজিমের ঘাট, সিপাহির ঘাট, খলিফারঘোনা, পশ্চিম গহিরা অংকুরী ঘোনা, সোনাইর মুখ, দক্ষিণ গহিরা, মোবারকখীল, গড়দুয়ারা, নাপিতের ঘাট, আমতুয়া ও হাটহাজারী উপজেলার রামদাশ মুন্সিরহাট, মাছয়াঘোনা, নয়াহাটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে দিনভর নদীর দু’পাড়ে ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। জানা যায়, প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা থেকে প্রায় চার শতাধিক নৌকা নিয়ে সাত শতাধিক ডিম আহরণকারী ডিম সংগ্রহ করেন। ডিম আহরণকারীরা কেউ ২-৩-৫ বালতি করে ডিম পেয়েছে।
ডিম আহরণকারী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীর পরিবেশ অনূকূলে থাকায় রাতে প্রচণ্ড বজ্রবৃষ্টি ও উজান থেকে পাহাড়ী ঢল নামলে নদীতে পুরোদমে ডিম ছাড়ে মা মাছ।
হালদা নদীর সিপাহীঘাট কুম এলাকার প্রবীণ ডিম আহরণকারী মো.ইদ্রিস বলেন, আমরা বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নদীতে অবস্থান করছি। রাত ২টার দিকে ডিম ছাড়ে মা মাছ। আমি ২-৩ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি। এর আগে
২০০ গ্রাম নমুনা ডিম সংগ্রহ করেছি। রাতে পুরোদমে ডিম ছাড়তে পারে মাছ। ডিম সংগ্রহকারী মাহবুবুল আলম বলেন, নদীতে ১০টি নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করি। প্রতিটি নৌকায় গড়ে ২ থেকে আড়াই বালতি করে ডিম পেয়েছি। এখানে রুই কাতলা মৃগেল ও কালিবাউস মাছের ডিম রয়েছে। হালদা নদীর ডিম আহরণকারী সমিতির সভাপতি মো. শফিউল আলম বলেন, ৬ টি নৌকা ও ২ টি বাঁশের ভোরকা করে ১৩ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, রাত ২ টার দিকে জোয়ারের সময় হালদা নদীর আমতুয়া অংশে কার্পজাতীয় মা মাছ পূরোদমে ডিম ছাড়ে। পরবর্তীতে ডিমগুলো হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। যারা প্রথম দিকে ডিম সংগ্রহ করতে নদীতে ছিলো তারা অধিক ডিম সংগ্রহ করেছিলো। ডিম সংগ্রহকারীরা গড়ে (২-২.৫) বালতি করে ডিম সংগ্রহ করেছে। কাঙ্ক্ষিত ডিম সংগ্রহ করতে পেরে ডিম সংগ্রহকারীদের মুখে হাসি ফুটেছে।
রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো.আলমগীর হোসেন বলেন, হালদা নদীতে প্রথমে দু’দফায় নমুনা ডিম ছাড়েন মা মাছ। বৃহস্পতিবার রাতে নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়েছে।রাউজান ও হাটহাজারী অংশে ৭শ ডিম সংগ্রহকারী প্রায় ৪০০টি নৌকা নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করেন। সংগ্রহ করা ডিম হ্যাচারিতে রেনু ফোটানোর কাজে ব্যস্ত ডিম সংগ্রহকারীরা।তবে জোয়ারের সময় হালদা নদীর পানি বেড়ে বেশ কিছু মাটির কূয়া পানির নিচে তলিয়ে। হালদায় মা মাছ কী পরিমাণ ডিম ছেড়েছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।