মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

ডিম ফুটানোর কাজে ব্যস্ত হালদার ডিম সংগ্রহকারীরা

শফিউল আলম, রাউজান ঃ প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে গত ৩০ মে দিবাগত রাতে ডিম সংগ্রহকারীরা এবার ১৪ হাজার ৬শত ৬৪ কেজি ডিম সংগ্রহ করেন । গত কয়েক বৎসরের তুলানায় ্এবার বেশী পরিমান ডিম সংগ্রহ করায় হালদা পাড়ে ডিম সংগ্রহকারীরা আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে । ডিম সংগ্রহকারীরা হ্যচারীতে ও নদীর তীরে বাড়ীর আঙ্গিনায় মাটির কুয়ায় ডিম ফুটানোর কাজে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে। হালদায় গত ২৭ মে ও ২৯ মে দফায় নমুনা ডিম ছাড়ার পর গত ৩০ মে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নদীতে জোয়ার ও উজান থেকে পাহাড়ী ঢলের শ্রোত নেমে আসে । প্রবল বর্ষন ও বজ্রপাত হয়। ঐ সময়ে নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে । প্রবল বর্ষন ও বজ্রপাতকে উপেক্ষা করে রাউজান হাটহাজারী হালদা পাড়ের বাসিন্দ্বা ডিম সংগ্রহকারীরা নদীতে নৌকা ও জাল নিয়ে নেমে পড়েন । ৫শত ৫০ জন ডিম সংগ্রহকারী ২শতাধিক নৌকা নিয়ে নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করেন । রাউজান হাটহাজারী ও আই,ডি এফ এর কর্মীরা নদী থেকে ১৪ হাজার ৬৬৪ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছে । হাটহাজারীর গড়দুয়ারার ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর জানান তিনি ১৩ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন । প্রতিজন ডিম সংগ্রহকারী গড়ে ৫ বালতি করে ডিম করে ডিম সংগ্রহ করেছেন বলে জানান ডিম সংগ্রহকারীরা । ডিম সংগ্রহ করার পর ডিম সংগ্রহকারীরা রাউজানের গহিরা মোবাবক খীল হ্যচারী, পশ্চিম বিনাজুরী আই, ডি, এফ এর হ্যাচারী, হাটহাজারীর মদুনাঘাট, মাছুয়াঘোনা, শাহ মাদারী হ্যচারী ও হালদা নদীর তীরে ও বাড়ির আঙ্গিণায় মাটির কুয়ায় ডিম ফুটানোর কাজে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন । গত ২০২২ সালে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি, ২০২১ সালে সাড়ে ৮ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছিল। ২০২০ সালে হালদা নদীতে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৯ সালে প্রায় সাত হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে স্থানীয়রা ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ২২ হাজার ৬৮০ কেজি।এর আগে ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।

রাউজানের পশ্চিম গহিরা অংকুরী ঘোনা, দক্ষিণ গহিরা, গহিরা মোবারকখীল, পশ্চিম বিনাজুরী, কাগতিয়া, আজিমের ঘাট, মগদাই, পশ্চিম আবুর খীল নাপিতের ঘাট, উরকিরচর, হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা, নয়াহাট, রামদাশ হাট, বাড়ীঘোনা, আমতোয়া, শাহ মাদারী ও মাছুয়াঘোনা, সিপাহির ঘাট এলাকায় হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করা হয়।রাউজানের দক্ষিণ গহিরা মোবারক খীল এলাকার বাসিন্দা, ডিম সংগ্রহকারী ইলিয়াছ বলেন, হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে গহিরা মোবারক খীল এলাকায় হ্যচারির কুয়াতে রেখে ডিম ফুটানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।রাউজানের পশ্চিম গহিরা অংকুরী ঘোনা এলাকার সুজিত বড়ুয়া বলেন, আমিসহ ৫ জন মিলে দুটি নৌকা নিয়ে হালদা নদী থেকে ১২ বালতি ডিম সংগ্রহ করি। সংগৃহিত ডিম বাড়ির পাশে নদীর তীরে মাটির দুটি কুয়ায় রেখে ফুটানোর কাজ করছি। হালদা নদীর মা মাছ ডিম ছাড়লে ডিম থেকে রেনু ফুটানোর জন্য রাউজানের পশ্চিম গহিরা এলাকায়, গহিরা মোবারক খীল, কাগতিয়া, রাউজানের গহিরা মোবারক খীল হ্যচারি ও হাটহাজারীর মদুনাঘাট, মাছুয়া ঘোনা, শাহ মাদারী এলাকায় হ্যচারী নির্মাণ করা হয়। তার মধ্যে রাউজানের পশ্চিম গহিরা ও কাগতিয়া এলাকায় নির্মাণ করা হ্যচারি কয়েক বছর ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। রাউজানের গহিরা মোবারক খিল হ্যচারি ও পশ্চিম বিনাজুরি আইডিএফ এর হ্যচারি, হাটহাজারীর মদুনাঘাট, মাছুয়া ঘোনা, শাহ মাদারী হ্যচ্যারিতে ডিম ফুটানোর কাজ চলছে ।বর্তমানে ১শ’ ৭৭টি মাটির কুয়ায় ডিম সংগ্রহকারীরা সনাতন পদ্ধতিতে ডিম ফুটানোর কাজ করছে । ডিম ফুটিয়ে রেণু উৎপাদন করার পর ডিম সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে মৎস্যচাষী, মৎস্য প্রকল্পের মালিকেরা এসে রেণু ক্রয় কওে নিয়ে যায় । রেনু ক্রয় করার পর পুকুর, জলাশয় বা মৎস্য প্রকল্পে হালদা নদীর মা মাছের ডিম থেকে ফুটানো রেনু ফেলে মাছের চাষ করবে। হালদা নদীর মা মাছের রেনু থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার মাছ উৎপাদন হয় প্রতি বৎসর। ডিম সংগ্রহকারী কয়েকজন বলেন, ডিম ফুটানোর জন্য নির্মাণ করা হ্যাচারি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় পশ্চিম গহিরা ও কাগতিয়ার হ্যচারি পুনঃনির্মাণ ও কয়েকটি নতুন হ্যচারি করলে ডিম ফুটানো আরো সহজ হবে।
রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, হালদা নদী থেকে ৫শত ৫০ জন ডিম সংগ্রহকারী ২ শতাধিক নৌকা নিয়ে গত ৩০ মে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাউজান, হাটহাজারী, আই, ডি, এফ এর কর্মীরা ১৪ হাজার ৬শত ৮৪ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছে । সংগৃহিত ডিম ছিল পরিপক্ক। তাই এবার ডিম ফুটানোর সময়ে ডিম নষ্ট হওয়ার আশংকা খুবই কম ।