মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

মিরসরাইয়ে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত, দুর্ভোগে মানুষ

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে টানা দুদিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ। দুর্বিসহ জীবন পার করছে অনেকে। ঢলের ¯্রােতে ভেঙে গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ সড়ক। ক্ষতি হয়ে রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতের। অনেক মৎস্য প্রকল্প থেকে পানিতে মাছ ভেসে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, সরকারতালুক, খিলমুরারী ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের, মধ্যম ওয়াহেদপুর, দক্ষিণ ওয়াহেদপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জোরারগঞ্জ-মুহুরীপ্রজেক্ট ও জোরারগঞ্জ-আবুরহাট সড়ক, বড়দারোগাহাট-কমরআলী সড়ক। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে কল-কারখানা গড়ে উঠায় সামান্য বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। উপজেলা সোনাপাহাড় এলাকায় বিএসআরএম কারখানা, দক্ষিণ ওয়াহেদপুর প্যারাগন ফিডমিল, ছদরমাদিঘী, বড়কমলদহ এলাকায় সিপি বাংলাদেশ লিঃ এর কারখানার কারণে ওই এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে।

মিরসরাই পৌরসভার মধ্যম মঘাদিয়া এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, ‘টানা দুদিনের ভারি বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলে আমাদের এলাকার সবকিছু ডুবে গেছে। মানুষের বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে রান্নাবান্না করতে পারছেনা। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলে পুরো এলাকা ডুবে যায়।’

সৈদালী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মাসুদ জানান, ‘মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠা ও খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে সৈদালী ডুবে থাকে। কারণ পানি নিস্কাশন না হওয়ায় আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকেনা। অনেকে রান্নাঘরে পানি উঠার কারণে চুলায় আগুন জ¦লেনি। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।’

উপজেলার মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন বলেন, পাহাড়ি ঢলে আমাদের হাবিব উল্লাহ ভূঁইয়া সড়ক ছরায় পূর্বপাশে ভেঙ্গে গেছে। বিশেষ করে হামিদ আলী ভূঁইয়া জামে মসজিদ থেকে রেল লাইন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার মিটার সড়কে ১৫দিন আগে সংস্কার কাজ করা হয়েছে।

কাটাছরা ইউনিয়নের বাসিন্দা মাওলানা শহীদুল ইসলাম বলেন, ভারি বর্ষনে জনগুরুত্বপূণ জোরারগঞ্জ-আবুরহাট সড়কে ভেঙ্গে খালে পড়েছে। এতে করে মানুষ চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন।

উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের কৃষক জসীম উদ্দিন জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আমার প্রায় এক একর জমির রোপা আমন তলিয়ে গেছে। এতে করে ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হতে হবে।

মৎস্য চাষী ইকবাল হোসেন বলেন, ইছাখালীতে কয়েকটি মৎস্য প্রকল্প থেকে পানির সাথে মাছ ভেসে গেছে। তবে বৃষ্টি আর না বাড়লে তেমন ক্ষতি আশঙ্কা নেই।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রোপা আমন ডুবে গেছে। এছাড়া সবজির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখনো ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, মৎস্য প্রকল্পগুলোর পাড় নিচু হওয়ায় দুইদিন বৃষ্টি হলেই পানি বাইরে চলে যায়। টানা বৃষ্টি হওয়ায় মৎস্যচাষীদের ক্ষতি হতে পারে। তবে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোমাইয়া আক্তার বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আমরা উপজেলা থেকে একটি কমিটি গঠন করে মনিটরিং করে যাচ্ছি।