মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

খাগড়াছড়িতে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনে বিশ্ব যোগ দিবস পালিত

ভোরের আকাশে তখনও আলো ফোটেনি ভালোভাবে। আলুটিলা তারেং চুমুই পাহাড়ের চূড়ায় যেন নামছে মেঘের আস্ত কুয়াশার চাদর। পাহাড়ের গায়ে গায়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির স্পর্শ আর হালকা বাতাসের মৃদু শীতলতা—সেই আবহেই শুরু হয় ধ্যান, প্রাণায়াম ও সূর্য নমস্কারের মতো যোগচর্চার ব্যতিক্রমধর্মী এক আয়োজন।

শনিবার (২১ জুন) বিশ্ব যোগ দিবস। আর এই দিনটিকে ঘিরেই খাগড়াছড়ি ইয়োগা সেন্টারের উদ্যোগে আয়োজিত হয় পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে মনের প্রশান্তি আর শারীরিক সচেতনতার এক অসাধারণ মেলবন্ধন।

পাহাড়ে ভোরের আলোয় যোগচর্চা: এক অপার্থিব অনুভব: পাহাড়ের চূড়ায় কুয়াশার মাঝে ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে থাকা মানুষগুলোকে দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে—তারা বুঝি প্রকৃতির সঙ্গে এক নিরব সংলাপে ব্যস্ত। বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ, গাছপালার ফাঁকে উঁকি দেওয়া সূর্যরশ্মি আর মাটি ছুঁয়ে আসা প্রাণায়ামের টান যেন সময়কে করে তোলে ধীর, গভীর, প্রার্থনারত।

যোগ, মনন ও নেতৃত্ব: এই আয়োজনের অন্যতম মুখ ছিলেন সমর কান্তি ত্রিপুরা—খাগড়াছড়ি ইয়োগা সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা এবং পেশাগতভাবে সোনালী ব্যাংক রাঙামাটি শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক। তাঁর সঞ্চালনায় পালিত হয় সূর্য নমস্কার, ধ্যান, ব্রিদিং এক্সারসাইজ এবং অন্যান্য আধুনিক যোগ কৌশল।
সঙ্গে ছিলেন ইয়োগা সেন্টারের পরিচালক সাগরিকা ত্রিপুরা, প্রশিক্ষক অর্পণ বিকাশ ত্রিপুরা, এবং নানা বয়সের যোগপ্রেমীরা, যারা পাহাড় ছুঁয়ে নতুন এক জীবনের শ্বাস নিয়েছেন।

স্বাস্থ্য, আত্মশুদ্ধি ও মানসিক প্রশান্তির উৎসব: এই আয়োজন শুধু শরীরচর্চা বা নিয়মিত অনুশীলনের ভেতরে সীমাবদ্ধ ছিল না। এটা ছিল এক ধরনের আত্মানুসন্ধান—যেখানে মানুষ নিজেকে খুঁজে নেয় প্রকৃতির গভীরতর স্তরে।

ছবি দিয়ে যেন বর্ণনা করা যায় এমন মুহূর্ত: প্রাকৃতিক আলো-ছায়ার খেলায় ভরপুর ছিল পুরো আয়োজন। বৃষ্টিভেজা ঘাসে খালি পায়ে ধ্যানরত মানুষ, শালগাছের ছায়ায় প্রাণায়াম, অথবা মেঘ ভেদ করে সূর্যের রশ্মিতে সম্মিলিত যোগভ্যাস—সবকিছুই যেন ছিল শিল্পের মতো নিখুঁত।

ভবিষ্যতের বার্তা: যোগ শুধু ব্যায়াম নয়, জীবনদর্শন: বিশ্ব যোগ দিবসে এই আয়োজন স্পষ্ট করেই দেখিয়ে দিল—যোগ মানে শুধু শরীরচর্চা নয়, এটা জীবনের প্রতি এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। প্রকৃতির সান্নিধ্যে এই আয়োজন যেন নতুনভাবে মনে করিয়ে দিল—শরীর ও মনের যত্ন নেওয়ার সময় এখনই।

এই আয়োজনটি ছিল চোখের আরাম, মনের প্রশান্তি আর শরীরের সচেতনতার এক অপূর্ব সমন্বয়। পাঠক, কখনো সুযোগ পেলে আমন্ত্রণ রইল—চলে যান আপনি ও তারেং চুমুই পাহাড়ের কোলে। কে জানে, হয়তো সেখানেই আপনি খুঁজে পাবেন আপনার নিজের প্রশান্তি।