গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসে মঙ্গলবার (২৪ জুন) একটি সাঁজোয়া যান বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে গেলে ইসরায়েলের সাত সেনা নিহত হয়, যা গত মার্চে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন হয়ে উঠেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ৬০৫তম কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নের এই সেনারা একটি ‘পিউমা’ সাঁজোয়া যানযোগে অভিযান চালাচ্ছিলেন। গাড়ির নিচে পুঁতে রাখা একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস বিস্ফোরিত হলে আগুন ধরে যায় এবং গাড়ির ভেতরে থাকা সাতজনই পুড়ে মারা যান।
নিহত সৈনিকরা হলেন—
• লেফটেন্যান্ট মাতান শাই ইয়াশিনোভস্কি (২১)
• স্টাফ সার্জেন্ট রোনেল বেন-মোশে (২০)
• স্টাফ সার্জেন্ট নিভ রাদিয়া (২০)
• সার্জেন্ট রোনেন শাপিরো (১৯)
• সার্জেন্ট শাহার মানোয়াভ (২১)
• সার্জেন্ট মায়ান বারুখ পার্লস্টাইন (২০)
• স্টাফ সার্জেন্ট আলোন ডেভিডভ (২১)
তারা সবাই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ৬০৫তম ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিটের সদস্য ছিলেন।
হামাস এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
এই ঘটনায় ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যুদ্ধ চলাকালে এ পর্যন্ত তাদের মোট ৪৪০ সেনা নিহত হয়েছে।
একই এলাকায় আলাদা আরেকটি ঘটনায়, একটি ডি-৯ বুলডোজার লক্ষ্য করে হামাসের রকেট চালিত গ্রেনেড (RPG) ছোড়া হলে আরও দুই ইসরায়েলি সেনা আহত হন, তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে নিহতদের ‘বীর সৈনিক’ বলে অভিহিত করেন এবং পরিবারগুলোর প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ও রাষ্ট্রপতি আইজ্যাক হারজগও গভীর শোক জানিয়েছেন।
গাজার ভেতর থেকে পুড়ে যাওয়া সাঁজোয়া যানটি পরবর্তীতে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানায় সেনাবাহিনী।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি জনগণের মধ্যে আবারও যুদ্ধের মূল্য, যৌক্তিকতা, সফলতা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে, যদিও সরকার জানিয়েছে যে, তারা হামাসকে পরাজিত না করা পর্যন্ত যুদ্ধ থামাবে না।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। ওইদিন হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক আক্রমণ চালায়, যার ফলে প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এই হামলাকে ইসরায়েল তাদের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ নিরাপত্তা বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত করে। এর জবাবে ইসরায়েল পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করে গাজা উপত্যকায়, যার মূল লক্ষ্য ছিল হামাসকে ধ্বংস করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা।
যুদ্ধের ফলে গাজায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে। এ পর্যন্ত ৫৬ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত ও প্রায় দেড় লাখ আহত হয়েছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে মানবিক বিপর্যয় ঘিরে।
এই যুদ্ধ এখনও চলমান, যার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, আঞ্চলিক সমীকরণ এবং মিশ্র সামরিক ফলাফলের ওপর। সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল