পাহাড়ের সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তাণ্ডবের আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলার ১২২টি বম পরিবারের পাঁচ শতাধিক সদস্য দীর্ঘ এক বছর পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় নিজ গ্রামে ফিরে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির প্রেক্ষিতে এসব পরিবার পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসাসহ নানামুখী সহায়তা পাচ্ছে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে।
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা রুমা ও থানচি উপজেলার সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি চালিয়ে ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র লুট করার পরপরই যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করে। এরপর থেকেই কেএনএফের নিপীড়ন, অপহরণ এবং গ্রেফতার আতঙ্কে পাহাড়ের বিভিন্ন পাড়ার বাসিন্দারা তাদের গ্রাম ছেড়ে ভারতের মিজোরামসহ বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যায়।
তবে সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক সফল অভিযানে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে রুমা ও থানচির বগালেক, কেওক্রাডং, দার্জিলিং পাড়া, প্রাতা পাড়া, সিলুপি পাড়া ও সুং সুং পাড়ার ১২২টি বম পরিবার নিজ গ্রামে ফিরে আসতে শুরু করে।
ফিরে আসা বম বাসিন্দারা বলেন, দীর্ঘদিন পরিবার নিয়ে জঙ্গলে পালিয়ে ছিলাম। খাবার, পানি কিছুই ছিল না। অনেক কষ্টে দিন পার করেছি। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই, সংঘাত চাই না। সেনাবাহিনীর সহায়তায় নিজ গ্রামে ফিরতে পেরে কৃতজ্ঞ।
বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি এবং বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য লাল জার লম বম বলেন, ‘যারা প্রাণভয়ে মিজোরামে পালিয়ে গিয়েছিল, তারাও ফিরতে শুরু করেছে। কয়েকটি পরিবার ইতোমধ্যে ফিরে এসেছে। আশা করি, এর মাধ্যমে আবারো পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে।’
সেনাবাহিনী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ফিরে আসা পরিবারগুলোর জন্য একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের ফিরে আসা শুধু দায়িত্ব নয়, এটি জাতীয় সংহতির প্রতীক ও পার্বত্য শান্তির পথে একটি মাইলফলক। পুনর্বাসন, শিক্ষা, জীবিকা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী পাশে থাকবে।’
এ সময় ১৬ বেঙ্গলের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ আতিকুর করিম বলেন, ‘কেউ পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করলে ছাড় দেওয়া হবে না। যারা অস্ত্রধারী, তারা আমাদের শত্রু। ফিরে আসা জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারবে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। যারা এখনো ফিরে আসেননি, তাদের বলছি আপনারা নিজ গ্রামে ফিরে আসুন। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সেনাবাহিনী আপনাদের পাশে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাহাড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি উন্নয়নের জন্যও সেনাবাহিনী কাজ করবে।’
উল্লেখ্য, চলমান যৌথ বাহিনীর অভিযানে এ পর্যন্ত কেএনএফ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ১২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।