চীনের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (৩০ জুন) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছি এবং আমরা আমাদের যা প্রয়োজন সেই প্রয়োজনটা ব্যাখ্যা করেছি এবং তারা (চীন) এটাতে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছেন। এটার ওপর তারা কাজ করছেন। আমরা যদি ভবিষ্যতে কখনও সরকার পরিচালনার দায়িত্বে আসি তখন সেটা আমরা ইতিবাচকভাবে দেখব।’
রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘চীন বলেছে, অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে তারা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন, মায়ানমার সরকারকে তারা রাজি করার চেষ্টা করছেন।’
বিগত তিনটি নির্বাচনে চীনের সমর্থন ছিল, গত ৫ তারিখের পরে আপনারা তিন বার চীন সফর করছেন, বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার চীনের মনোভাবটা কী দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত পজিটিভ।’
পার্শ্ববর্তী একটা দেশের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক রাজনৈতিক সম্পর্ক বিগত দেড় দশকে এতটা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গেছে, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে কি আপনারা আসলে চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বটা আপনারা আরও দৃঢ় করার চেষ্টা করছেন? – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চীনের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে যে আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার। আমরা কিন্তু এক নীতি থেকে কখনো সরিনি, তাইওয়ানের একটা ট্রেড সেন্টার এখানে কয়েকদিনের জন্য হয়েছিল। তারপরে সেটাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
লিখিত বক্তব্য বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘৫ দিনব্যাপী এই সফরে আমরা চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং চীন সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিময় করার সুযোগ পেয়েছি যাদের মধ্যে ছিলেন- চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য এবং ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংসং, সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী মিস্টার লিউ জিয়ানচাও, সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার মিসেস সান হাইয়ান এর সঙ্গে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী সম্প্রতি উদযাপিত হয়েছে। এটা সেই ঐতিহাসিক সম্পর্ক যা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চীন সফরের মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল এবং যা পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্বকালে সফরের মাধ্যমে আরও ঘনিষ্ঠতর হয়েছে। প্রতিটি বৈঠকে চীনা নেতারা বাংলাদেশ চীন সম্পর্ক উন্নয়নে এই দুই ব্যক্তিত্বের অবদান স্বসম্মানে ব্যক্ত করেছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বৈঠকে পলিসি ব্যুরোর সদস্য শি- লি-হংসং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং দ্রুতই একটি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে চীনের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে পরীক্ষিত বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে চীনের অবদানসমূহ আমাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর ধারাবাহিকতায় আগামীতে ডিজিটাল প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, মেডিকেল ও স্বাস্থ্যসেবা, উচ্চশিক্ষা, যোগাযোগ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, এসএমই বিজনেস, ব্লু ইকোনমি উন্নততর প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে চীনের অধিকতর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চীনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থান সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আমরা এর অধিকতর প্রয়োগিক দৃষ্টান্ত দেখার অপেক্ষায় রয়েছি, যাতে আমাদের মাঝে সাংস্কৃতিক ও সফর বিনিময়, প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে সেটা আরোও দৃঢ়তর হতে পারে। আমরা মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ স্বেচ্ছায় এবং সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে চীনের অধিকতর এবং কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে পারস্পারিক মর্যাদা সমুন্নত রেখে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ভাবনায় এমন সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছি যেখানে জনগণ এবং জনকল্যাণের অগ্রাধিকার যেন থাকে সর্বোচ্চ স্থানে। আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতির বিবেচনায় নির্যাতিতদের পক্ষে তাদের অবস্থানকে আমরা সম্মানের সঙ্গে অভিনন্দিত করেছি এবং এর ব্যাপকতা দৃশ্যমানতার আহ্বান জানিয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য- মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, জহির উদ্দিন স্বপন, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল ও চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার।