মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

সুবর্ণচর উপজেলা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন, চবি’র রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

“সুবর্ণ আলোয় আলোকিত হোক বাংলাদেশ”—এ স্লোগানকে ধারণ করে সুবর্ণচর উপজেলা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান অনুষদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন এবং রজতজয়ন্তী স্মারক ‘সুবর্ণমৈত্রী’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চবি ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক ড. মো. আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম সাতকানিয়া যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ শাহীন সিরাজ, নোয়াখালী জেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট এ.বি.এম. জাকারিয়া, লক্ষ্মীপুর রামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ দিদারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (পিবিআই) আবু জাফর মো. ওমর ফারুক, ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজান বিন মজিদ, চবি রাজনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে পিটুপির সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজার মো. আব্দুল গণি, ঢাকা হাইকোর্টের আইনজীবী মো. তরিকুল্লাহসহ প্রমুখ। সুবর্ণচর উপজেলা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন, চবি’র সভাপতি মো. তামজিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সদস্য মো. শামীম হোসাইন ও আনসারু হক মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রেসেলাত লিছান।

চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া আখতার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও একাডেমিক জ্ঞানচর্চার এক অসাধারণ মিলনস্থল। সবুজ পাহাড় ও পাখির কলতানে মুখরিত এ ক্যাম্পাসে প্রতিদিনই জেগে ওঠে নতুন সম্ভাবনা। বিশ্ববিদ্যালয় কেবল পাঠদান ও গবেষণার কেন্দ্র নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত সংস্কৃতি, যেখানে জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিকশিত হয় একাডেমিক পেশাদারিত্ব, নৈতিকতা, মানবিকতা ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ।

তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, সুবর্ণচর উপজেলা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন, চবি তার গৌরবময় রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ‘সুবর্ণমৈত্রী’ স্মরণিকা প্রকাশ করেছে। এটি শুধু একটি প্রকাশনা নয়, এটি এসোসিয়েশনের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ছাত্র-সংগঠনের দায়িত্বশীলতার এক অনন্য দলিল। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পথনির্দেশক হয়ে থাকবে।

উপাচার্য আরও বলেন, এটি সংগঠনটির দীর্ঘ ২৫ বছরের পথচলার স্বর্ণালী অর্জনের এক স্মরণীয় ও গৌরবময় অধ্যায়, যা শিক্ষার্থীদের ঐক্য, সহমর্মিতা ও সমাজসেবার দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে এবং ভবিষ্যতে সুবর্ণচরবাসী শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে গণ্য হবে। সংগঠনটি সুবর্ণচরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একতা, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলা সমিতিগুলো শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক গতিধারা ও কর্মকাণ্ডকে ধরে রাখতে এবং সমৃদ্ধ করতে অবদান রাখছে।

উপাচার্য রজতজয়ন্তীর এ মাহেন্দ্রক্ষণে এসোসিয়েশনের সকল সাবেক ও বর্তমান সদস্য এবং তাদের অভিভাবকতুল্য নেতৃত্বকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভকামনা জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী পথচলায় এ সংগঠন হবে আরও বলিষ্ঠ, উদার ও মানবিক চেতনায় সমৃদ্ধ। সুবর্ণচরের শিক্ষার্থীরা যেন দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেধা, নিষ্ঠা ও নৈতিকতার পরিচয় দিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব সমুজ্জ্বল করে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তিনি এসোসিয়েশনের সকল সমাজসেবামূলক ও মানবিক কর্মকাণ্ডের সাফল্য কামনা করেন।

অনুষ্ঠানে উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যদ্বয় নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন এবং কৃতি ও বিদায়ী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন।

উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, আজকের এই রজতজয়ন্তীর আয়োজনে অংশ নিতে পেরে আমি আনন্দিত। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে এ সংগঠনকে যারা প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে ছাত্র সংগঠনগুলোর ইতিবাচক ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুবর্ণচর উপজেলা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন তারই উজ্জ্বল উদাহরণ। জ্ঞান ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। শিক্ষার পাশাপাশি সৃজনশীলতা, নেতৃত্বের দক্ষতা ও সামাজিক দায়বোধ গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার বিষয়ক সেমিনার আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও পরিচালকদের নির্দেশনার কথাও জানান। তিনি বলেন, সুবর্ণচর উপজেলা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন, চবি’র রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ‘সুবর্ণমৈত্রী’-র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ও প্রেরণাদায়ক।

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠানে এসে আমি যেন এক ধরনের আত্মীয়তায় জড়িয়ে পড়েছি। ২৫ বছর কোনো ছোট সময় নয়। এ সময়ে এসোসিয়েশন প্রমাণ করেছে—উদ্যোগ, ঐক্য আর ইতিবাচক মানসিকতা থাকলে বড় কিছু অর্জন সম্ভব। রজতজয়ন্তী উপলক্ষে সংগঠনের সকল সদস্য, শুভানুধ্যায়ী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার জন্যই আমরা আছি। শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করছি। পঁচিশ বছরের পথচলা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি শুধু সময়ের পরিক্রমা নয়, বরং ঐক্য, সহমর্মিতা ও নিরলস প্রচেষ্টার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সংগঠনটির অবদান এবং নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিচিতি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। সংগঠনটি যেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব, নৈতিকতা ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে—এ প্রত্যাশা করি।

উপ-উপাচার্য বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উজ্জ্বল ছাত্রসংগঠন হিসেবে এর অভিযাত্রা আমাদের শিক্ষাঙ্গনের বহুত্ববাদী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মূল্যবোধনির্ভর পরিবেশকে সমৃদ্ধ করেছে। ভবিষ্যতেও এ সংগঠন জাতি ও সমাজ গঠনে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে এ প্রত্যাশা করি।

অনুষ্ঠানে সুবর্ণচর উপজেলা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দ, তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।‌ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ, কৃতি ও বিদায়ী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং র‍্যাফল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।