“নিরস্ত্র-নিরীহ ছাত্রসেনা কর্মীদের উপর সশস্ত্র সন্ত্রাসীসহ যৌথবাহিনীর হামলার প্রতিবাদে কাল সারাদেশে বিক্ষোভ”
অবরোধে হামলায় আহত: শতাধিক, গ্রেপ্তার ৩৭ জন
গাজীপুরে মব সৃষ্টি করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য, ঢাকা মহানগরীর সাবেক সভাপতি, মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনের খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ছাত্রসেনার আহ্বানে দেশব্যাপি জেলা-উপজেলায় সড়ক-মহাসড়কে সোমবার (৫ মে) সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
অবরোধ পরবর্তী সোমবার বিকাল ৪ টায় চট্টগ্রাম দলীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল আলম। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআতের মিডিয়া সেলের প্রধান অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে ছাত্রনেতা সাহেদ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার ডাকা শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরস্ত্র-নিরীহ ছাত্রসেনা কর্মীদের উপর পুলিশসহ যৌথ বাহিনীর হামলা, লাঠিচার্জ ও গণগ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে একদদল চিহ্নিত গোষ্ঠীর কিছু উগ্র সন্ত্রাসী ছাত্রসেনার নেতাকর্মীদের উপর হামলায় অংশ নেয়, যা পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ অহিংস কর্মসূচিকে সহিংস করতে চায়। আপনারা তাদের আইনে সোপর্দ করুন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ছাত্রসেনার অবরোধে সমর্থন দিয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআত, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বিভিন্ন দরবারে সূফিবাদী জনতা সতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন। দেশের মহাসড়কসমূহ তথা ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রংপুর, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িসহ দেশের অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়কে অবরোধে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। রেলপথ-নৌপথেও অবরোধ পালিত হয়। সারাদেশে কয়েকটি স্থানে যৌথ বাহিনী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ছাত্রসেনার নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে।
বিশেষত: ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, চট্টগ্রামের মুরাদপুর, অক্সিজেন মোড়, রাঙ্গুনিয়া, বাঁশখালী, ফটিকছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশি আক্রমণে শতাধিত নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন এবং বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সারাদেশে ছাত্রসেনা, যুবসেনা ফ্রন্টসহ সুন্নী ৩৭ জন নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার হয়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় যে, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সুন্নি বিদ্যাপীঠ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা এলাকার কাছাকাছিও পুলিশি হয়রানি, উত্তেজনা ও সহিংসতা ছড়িয়েছে। ছাত্রসেনার ভাষ্যমতে, এটি শুধু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হস্তক্ষেপ নয়, বরং একটি ধর্মীয় কেন্দ্রের পবিত্রতার উপর আঘাত, যা সুন্নি জনগোষ্ঠীর আত্মমর্যাদায় আঘাত হানে। ব্রিফিংয়ে আরো বলা হয়“যে মারকাজ থেকে যুগ যুগ ধরে আকীদা রক্ষা ও সত্য ইসলামের প্রচারে নেতৃত্ব এসেছে, সেই এলাকা আজ রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের শিকার এটা শুধু দুঃখজনক নয়, এক গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করে।” ছাত্রসেনা নেতৃবৃন্দ বলেন, ইমাম রঈস উদ্দিন হত্যার মামলা অবশেষে রুজু হলেও এখনো আসামিরা গ্রেফতার হয়নি। উপরন্তু, আজকের হামলা প্রমাণ করে, প্রশাসন বিচারপ্রক্রিয়ায় আন্তরিক নয়।
এসময় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার পক্ষ থেকে তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়: (১) অবিলম্বে রঈস উদ্দিন হত্যার আসামীদের গ্রেফতার (২) হামলায় জড়িত পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে বিচার (৩) গ্রেফতারকৃত সকল ছাত্রসেনা কর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। অবরোধ কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল ৬ মে মঙ্গলবার সারাদেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির পালিত হবে। একই সঙ্গে বিকাল ৩টায় ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাব ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে কালো পতাকা মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআতের মিডিয়া সেলের প্রধান অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআত তথা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা অহিংস সূফিবাদ এবং শান্তিকামী, কিন্তু ন্যায়বিচারের প্রশ্নে আমরা আপোষ করবো না। রইস উদ্দীন ন্যায় বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আরও কঠোর কর্মসূচির জন্য আমরা প্রস্তুত।” সংবাদ সম্মেলনের শেষে সংগঠনটি দেশের গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা, সচেতন নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানায় যেন তারা এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন, আহলে সুন্নাত কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা এনাম রেজা, সাবেক সহ-সভাপতি আদনান তাহসিন আলমদার, সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল আলম, সাবেক আইটি সম্পাদক সামশুল আরেফীন খালেদ, অর্থ সম্পাদক সোওয়দ মুহাম্মদ তারেক, দাওয়াহ সম্পাদক মুহাম্মদ ওসমান, সদস্য মিনহাজুল আবেদীন, মুহাম্মদ আরমান হোসাইন প্রমুখ।