মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২
মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২

কর্ণফুলী নদীর ড্রেজার এর আতঙ্কে রাঙ্গুনিয়াবাসী

কামরুল ইসলাম, রাঙ্গুনিয়া: কর্ণফুলি ছোট্ট একটি নাম। অথচ এর সাথে মিশে আছে আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ। এই নদীর সাথেই জড়িয়ে আছে এ দেশের হাজারো সংস্কৃতি। কিন্তু আমরা আজ সেই কর্ণফুলিকে গলা টিপে হত্যা করছি। কিন্তু কেন?

বেশ কিছুদিন যাবত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় কর্ণফুলী নদী রক্ষায় ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় জনতা ও ছাত্রসমাজ। দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী মহলের নেতৃত্বে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে ইছাখালী চত্বরে “রাঙ্গুনিয়া সচেতন ছাত্র সমাজ” ও সর্বস্তরের জনসাধারণের উদ্যোগে এক অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মসূচি শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসানের কাছে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা কর্ণফুলী নদী রক্ষায় চার দফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—
✔কর্ণফুলী নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ;
✔উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে নদী রক্ষা কমিটি গঠন;
✔ হুমকির মুখে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি রক্ষায় নিরাপত্তা বাঁধ নির্মাণ;
✔অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা।

রাঙ্গুনিয়া সচেতন ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন,“প্রশাসন যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে ছাত্রসমাজ ও জনসাধারণ মিলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা, কদমতলী, কোদালা, সরফভাটা, বেতাগী ও শিলক ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এতে নদীর পাড় ভেঙে বসতবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সড়ক ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ছাত্রনেতারা বলেন, ড্রেজার মেশিনের বিকট শব্দে মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটে ধুলাবালিতে বিদ্যালয়গামী কোমলমতি শিশুদের শ্বাসকষ্ট ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। নদীর পাড় ভাঙনে অনেক পরিবার ইতোমধ্যে বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে।

৩ অক্টোবর বেতাগি এলাকায় সর্বস্তরের মানুষ মানববন্ধন করে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানায়। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে এলাকাবাসী। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, প্রশাসনের একাংশের যোগসাজশে নদীতে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। এমনকি মহাল ইজারা দিয়ে বালু উত্তোলনে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন তারা।
বেতাগির বাসিন্দা কৃষক আজিজ জানান- মধ্যরাতে ড্রেজারের ভয়ংকর শব্দে ৪/৫ কিলোমিটার কেপে উঠে, ফসলি জমি ফাটল ধরছে, এমনকি শিশুদের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাড়িয়েছে।

এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন,“কর্ণফুলী নদীর দুটি স্পটে জেলা প্রশাসনের অনুমোদিত বালুমহাল রয়েছে। কিন্তু কোথাও ড্রেজার ব্যবহারের অনুমতি নেই। তবুও অনেকে নিয়ম ভঙ্গ করছে। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়রা মনে করছেন, প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই কর্ণফুলী নদীকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

প্রধান খবর

নির্বাচিত খবর