মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে পেশাজীবীদের সোচ্চার অংশগ্রহণ জনগণকে আশা জুগিয়েছিল’

বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি), চট্টগ্রাম শাখার আয়োজনে শনিবার (০৫ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ভিআইপি কনফারেন্স হলে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ পেশাজীবি প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি। এবং সঞ্চালনা করেন বিএসপিপি চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা.খুরশীদ জামিল।

সভায় বক্তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে পেশাজীবীদের করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা বলেন, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় পেশাজীবীদের সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের জুলাই নতুন করে গণজাগরণের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই মাসে জনগণের মধ্যে জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন, এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর একচেটিয়া ব্যবহার নিয়ে।
এই ক্রান্তিকালে দেশের বিবেক বলে পরিচিত সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) সামনে আসে জাতিকে পথ দেখাতে। তারা চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী অসংখ্য কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং স্পষ্ট ভাষায় সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধে জীবনবাজি রেখে প্রতিবাদ করেন।

চট্টগ্রামে পেশাজীবী মতবিনিময় সভা:জুলাই বিপ্লব স্মরণে কেন্দ্রিয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এই মতবিনিময় সভায়। এছাড়া বক্তারা বিএসপিপির পক্ষে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: অবিলম্বে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা।

চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য মোঃ নসরুল কদির চৌধুরী বলেন, “জনগণের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে সুশাসন ও গণতন্ত্র। পেশাজীবীদের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে জনগণের পাশে দাঁড়ানো।”

ডা. খুরশীদ জামিল বলেন, স্বাস্থ্যখাতে রাজনীতির থাবা সাধারণ রোগীদের জীবনকে বিপন্ন করেছে। আমরা চিকিৎসকরা সবার আগে মানুষের পক্ষে কথা বলব।”

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা বলতে চাই—আমরা আর চুপ করে থাকব না। আমরা সত্য বলব, জনগণের কথা বলব, এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।

এই জুলাই বিপ্লব আমাদের নতুনভাবে শেখাচ্ছে—কীভাবে সাহসিকতা ও নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে হয়। আমরা চাই, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হোক।”

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তার বলেন, জুলাই বিপ্লবে চট্টগ্রামের আইনজীবীদের সাহসী ভূমিকা ছিল। জুলাই মাসে যখন দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে পড়েছিল, তখন দেশের অন্যান্য শ্রেণির পেশাজীবীদের পাশাপাশি চট্টগ্রামের আইনজীবীরা অসামান্য সাহসিকতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁরা আদালতের ভেতরে ও বাইরে—উভয় ময়দানে ছিলেন সোচ্চার। সাধারণ মানুষের আইনি অধিকার, গ্রেপ্তারকৃত রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিকদের পক্ষে দাঁড়িয়ে আইনজীবীরা প্রমাণ করেছেন—ন্যায়বিচার ও সংবিধান রক্ষার শেষ ভরসাস্থল এখনো জীবিত।

অনুষ্ঠানের সভাপতি জাহিদুল করিম কচি বলেন, এই মুহূর্তে পেশাজীবীদের ঐক্যই পারে দেশকে নতুন গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে। আর সেই ঐক্য ও সংগ্রামে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভূমিকা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ডা. জসিম উদ্দিন, ডা. তমিজ উদ্দিন, ডা. ইছা চৌধুরী, ডা. সারোয়ার আলম, ডা. ইমরুজ উদ্দীন, ডা. শামীম আলম মামুন, ডা. মোনায়েম ফরহাদ, ডা. সাকিরুর রশীদ, ডা. হাসান উল বান্না, ডা. সায়েফ উদ্দিন সোহাগ, ডা. রিফাত কামাল রনি, ডা. আসিফ এবং ডা. তাশফীদ।

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি ও বিচার অঙ্গনের প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান আলী চৌধুরী, মহানগর পিপি মফিজুল হক ভুঁইয়া, আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, স্পেশাল পিপি এম ইউ নুরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট জহুরুল আলম, তৌহিদুল ইসলাম, নুরুল করিম এবং মো. ওসমান।

প্রকৌশলী প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার সেলিম মো. জানে আলম, ইঞ্জিনিয়ার মো. কামরুজ্জামান, ইঞ্জিনিয়ার মো. শহীদুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মো. আমিনুর রহমান (সুমন), ইঞ্জিনিয়ার মিসবাউল আলম, ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ আলম এবং ইঞ্জিনিয়ার মামুনুল বাশরী।

সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুস্তফা নঈম (বিশেষ প্রতিনিধি ও ব্যুরো চীফ, চট্টগ্রাম, কালের কণ্ঠ), সালেহ নোমান সাধারন সম্পকদক সিএমইউজে, হাসান মুকুল (চট্টগ্রাম ব্যুরো চীফ, দিনকাল), এবং জাহাঙ্গীর আলম (চট্টগ্রাম ব্যুরো চীফ, বিজনেস বাংলাদেশ)।

ব্যাংকার প্রতিনিধি ছিলেন মেহেরাজ হোসেন খান এবং মিনহাজ উদ্দীন আহমেদ। শিক্ষক সমাজের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন এম এন শাপা ও মো. আবদুল হক। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সমাজকর্মী ও বিশিষ্ট ব্যক্তি লায়ন জসিম উদ্দীন, সালাহ উদ্দীন আলী প্রমুখ।