চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে এক মর্মান্তিক ঘটনা পুরো উপজেলাজুড়ে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সৌদি আরবে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারানো প্রবাসী মোহাম্মদ রুবেল (৩০)-এর মরদেহ দেশে আসার পথে, সেই মরদেহ গ্রহণ করে নিজ বাড়িতে ফেরার সময় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তার বড় ভাই মো. বাবুল (৪০) ও ফুপাতো ভাই ওসমান গণি (৪৫)।
শনিবার (৫ জুলাই) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুর ইউনিয়নের তালুকদার পাড়ায় চলছে শোকের মাতম।
স্থানীয় বাসিন্দা ভিডিপি সদস্য জয়নাল আবেদিন জানান, ভূজপুর ইউনিয়নের তালুকদার পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ রুবেল পরিবারের অভাব ঘোচাতে এবং সচ্ছলতার স্বপ্ন পূরণের আশায় ২০২৪ সালে সৌদি আরব পাড়ি জমান। কিন্তু তার প্রবাস জীবন ছিল নিদারুণ কষ্টের। ক্ষুধার্ত অবস্থায় দোকান থেকে মালিকের অনুমতি ছাড়া একটি বার্গার খাওয়াকে কেন্দ্র করে তিনি নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। মারধরে গুরুতর আহত রুবেল মদিনার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে মারা যান। রুবেলের মৃত্যুর পর শুরু হয় দীর্ঘ এক বছরের আইনি লড়াই, যার পর অবশেষে তার নিথর দেহ কফিনে বন্দি হয়ে দেশের পথে ফিরছিল।
পরিবারের ওপর রুবেলের মৃত্যুর শোক না কাটতেই নেমে আসে আরও এক পাহাড় সমান দুঃসংবাদ। সৌদি আরব থেকে ছোট ভাই রুবেলের কফিন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রহণ করে তার নিজ গ্রাম ফটিকছড়ির ভূজপুরের উদ্দেশে ফিরছিলেন বড় ভাই মো. বাবুল এবং ফুপাতো ভাই ওসমান গণি। পথিমধ্যে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা এলাকায় তাদের বহনকারী লাশবাহী গাড়িটি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান মো. বাবুল ও ওসমান গণি। এই ঘটনায় বশির নামের আরেক আত্মীয় আহত হয়ে কুমিল্লার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দিন আছে।
ভূজপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এই দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক, প্রাইভেটকার যাত্রী এবং অ্যাম্বুলেন্সের যাত্রীসহ মোট তিনজনের প্রাণহানি হয়েছে। তবে নিহতদের মধ্যে মো. বাবুল ও ওসমান গণি নিশ্চিত বলে জানা গেছে।
রুবেলকে আনতে গিয়েই এই দু’জন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন এবং ঘটনাস্থলে মারা যান। নিহতদের মরদেহ বর্তমানে কুমিল্লার স্থানীয় একটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মরদেহ আনতে রওনা দিয়েছেন।