রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. হাসান মোহাম্মদ স্মারক বক্তৃতা ২০২৫ সোমবার (৭ জুলাই) সকাল ১০:৩০টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘ইসলামের বিশ্বায়ন, বাংলাদেশ ও আমাদের জাতিসত্তা’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি প্রফেসর ড. হাসান মোহাম্মদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে স্মারক বক্তৃতা আয়োজনের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। আরও বলেন, শিক্ষাজীবনে ড. হাসান মোহাম্মদের সঙ্গে বিভিন্ন একাডেমিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম এবং নানা কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তাঁর বর্ণিল জীবন ছিল অত্যন্ত অনন্য। উপ-উপাচার্য বলেন, ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও সংস্কৃতি আমরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই। এ বিশ্বে ইসলামের অসংখ্য অনুসারী রয়েছেন, কিন্তু ইসলামের মৌলিক বক্তব্য আমরা ভুলে গেছি। তিনি বলেন, আজ বিশ্বজুড়ে মুসলমানেরা কেবল অনৈক্যের কারণে নির্যাতিত হচ্ছে। মুসলমানদের চরিত্র ও ঐক্যের অভাব রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি ইসলামের আদর্শ ধারণ, লালন ও চর্চার মাধ্যমে এবং বৃহৎ পরিসরে ইসলাম সম্পর্কে জানার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে স্মারক বক্তা মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন।
বিশেষ অতিথি চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার প্রথম ক্লাস নিয়েছিলেন প্রফেসর ড. হাসান মোহাম্মদ। তিনি তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং বলেন, তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার কোনো কমতি ছিল না। উপ-উপাচার্য আরও বলেন, আজকের স্মারক বক্তা প্রফেসর ড. হাসান মোহাম্মদ সম্পর্কে চমৎকার আলোচনা করেছেন। এ সমৃদ্ধ আলোচনা রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে গ্রন্থ আকারে প্রকাশের জন্য তিনি স্মারক বক্তার প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ড. হাসান মোহাম্মদের নেতৃত্বে আমরা কাজ করেছি। তাঁর দেখানো পথ, রোডম্যাপ ও নীতিমালার অনুসরণে আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তিনি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং বলেন, তিনি রেখে যাওয়া কর্মের মাধ্যমে আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
সেমিনারে স্মারক বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট লেখক, চিন্তক, গবেষক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লি. এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান। স্মারক বক্তৃতায় প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. ভূঁইয়া মো. মনোয়ার কবির এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রফেসর ড. আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহ।
স্মারক বক্তা মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, প্রফেসর ড. হাসান মোহাম্মদ ছিলেন এ জাতির একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান। ইসলামিক চিন্তা-চেতনা, ইসলামের বিশ্বায়ন, বাংলাদেশের জাতিসত্তা ইত্যাদি বিষয়ে তিনি যথেষ্ট গবেষণা করে গেছেন। তাঁর গবেষণা কর্মগুলো বিভিন্ন গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়েছে। বক্তৃতায় তিনি ইসলামের আবির্ভাব, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন এবং ইসলাম প্রচারে বিভিন্ন নবী-রাসূল ও সাহাবিদের বংশপরম্পরা ও জীবনীর বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে ধর্ম প্রচারকদের আগমন সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ফলে এ দেশে অনেক পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়েছে এবং জাতি তা স্বাগত জানিয়েছে। পরিশেষে তিনি বলেন, প্রফেসর ড. হাসান মোহাম্মদ তাঁর গবেষণাকর্মের মাধ্যমে যে অবদান রেখে গেছেন, তা জাতীয় জীবনে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
প্যানেল আলোচক চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. ভূঁইয়া মো. মনোয়ার কবির বলেন, আমি যখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে ১৯৮৩ সালে যোগদান করি, প্রফেসর ড. হাসান মোহাম্মদকে একজন সুদর্শন, স্মার্ট শিক্ষক ও সহকর্মী হিসেবে পেয়েছি। তিনি একজন চিন্তাশীল, পরোপকারী শিক্ষক ও গবেষক ছিলেন। তিনি ইসলামী চিন্তাধারা, ইসলামের প্রচার-প্রসার, ইসলামের বিশ্বায়ন এবং বাংলাদেশের জাতিসত্তা বিষয়ে প্রচুর লেখালেখি করেছেন, যা পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে সংকলন করে তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজে লাগানোর জন্য রেখে গেছেন। তার অবদান দেশ ও জাতি স্মরণ রাখবে।
আরেকজন প্যানেল আলোচক চবি লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রফেসর ড. আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহ তার আলোচনায় ইসলামের দীর্ঘ পথপরিক্রমার বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, ইসলামই একমাত্র শান্তির ধর্ম, যেখানে মানবজাতির ইহকাল ও পরকালের শান্তি নিহিত রয়েছে। যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ এ শান্তির বার্তা নিয়ে মানবজাতির কাছে ইসলাম প্রচারে এসেছেন। তিনি ইসলামের মূলবাণী পবিত্র কুরআন ও এর অর্থ পাঠের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে গবেষণার আহ্বান জানান।
চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. এ. কে. এম. মাহফুজুল হক (মাহফুজ পারভেজ) -এর সভাপতিত্বে এবং উক্ত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ. জি. এম. নিয়াজ উদ্দিনের সঞ্চালনায় স্মারক বক্তৃতায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও চবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. এনায়েত উল্লাহ পাটোয়ারী। তিনি বলেন, প্রফেসর ড. হাসান মোহাম্মদ বহুগুণে গুণান্বিত ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন আদর্শ শিক্ষক ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের নয়নমনি ছিলেন।
চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. এ. কে. এম. মাহফুজুল হক (মাহফুজ পারভেজ) বলেন, চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আর. আই. চৌধুরীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত একটি সমৃদ্ধ বিভাগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ বিভাগে স্বনামধন্য শিক্ষক-গবেষকবৃন্দ শিক্ষাদান করে এ বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশকে আলোকিত করেছেন। এই কৃতি শিক্ষকদের অসংখ্য শিক্ষার্থী বর্তমানে দেশ-বিদেশে স্ব-স্ব মহিমায় আলোর প্রদীপ হয়ে জ্বলছে। তাঁরা এ দেশ ও জাতির সম্পদ। এদের মধ্যে প্রফেসর ড. হাসান মোহাম্মদ অন্যতম। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের স্মারক বক্তৃতা বা পাবলিক লেকচার বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে—এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
সেমিনারে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন চবি মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. হাসান মোহাম্মদের সুযোগ্য সন্তান ড. ফুয়াদ হাসান। তিনি উপস্থিত অতিথিবৃন্দসহ সকলকে শুভেচ্ছা, স্বাগত ও ধন্যবাদ জানান। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে একটি একাডেমিক আলোচনায় উপস্থিত হওয়ায় তিনি সকলের প্রতি প্রফেসর ড. হাসান মোহাম্মদের পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, আমার বাবা একজন একাডেমিশিয়ান হিসেবে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ছেড়ে যাননি। তিনি আমাদেরকে শত্রু কমানো এবং বন্ধু বাড়ানোর জন্য উপদেশ দিতেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও তথ্য ও ফটোগ্রাফি শাখার প্রশাসক ড. মো: শহীদুল হক। অনুষ্ঠান শেষে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন মিঝি।