টানা বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকায় বাধ্য হয়ে ট্রলার নিয়ে ফিরে আসছেন উপকূলে। জেলেরা বলছেন, সাগরে না যেতে পারায় ঘাটে বসেই দিন কাটাতে হচ্ছে, অথচ পরিবার চালানোর কোনো উপায় নেই।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানায়, বর্ষাকালের সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট বায়ুচাপের তারতম্যে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। গত ২০ দিনে অন্তত ৪ বার ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। শনিবার (৫ জুলাই) পর্যন্তও সমুদ্রবন্দরসমূহের জন্য ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে।
আবহাওয়ার এ পরিস্থিতিতে সাগরে মাছ ধরতে না পারায় চরম সংকটে পড়েছেন কক্সবাজার, মহেশখালী, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার অন্তত ৬ হাজার ফিশিং ট্রলারের শ্রমিক ও মালিকরা। এসব ট্রলারে কাজ করেন প্রায় এক লাখ জেলে। বর্তমানে অধিকাংশ ট্রলার বাঁকখালী নদীর বিভিন্ন ঘাটে নোঙর করে আছে। উল্লেখ্য, ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরও সাগরে ইলিশ শিকারে যেতে পারছেন না কক্সবাজার উপকূলের জেলেরা।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ‘বর্ষার মৌসুমি বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এ সময় বায়ুচাপের তারতম্য, ঝড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টিপাত হবে। তাই সতর্ক সংকেতের সময় সাগরে যাওয়া বিপজ্জনক। এ ব্যাপারে জেলেদের সতর্ক থাকতে হবে এবং নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।’
জেলে কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘সাগর উত্তাল থাকায় ইলিশ ধরতে যেতে পারছি না। এখন সংসার কিভাবে চলবে তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছি।’ জেলে আরিফ বলেন, ‘অর্থাভাবে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ১০ বছরের জেলে জীবনে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আগে হতে হয়নি।’
এদিকে কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘১২ জুন নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর থেকেই সাগর উত্তাল। গত ২০ দিনে ৪ বার সংকেত এসেছে। ট্রলারগুলো ঘাটে পড়ে আছে, মালিকেরা লোকসানে জর্জরিত। জেলেরাও পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছে। এমন অবস্থায় সরকারিভাবে জেলে ও মালিকদের প্রণোদনার ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।’
জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরে মাছ ধরতে পারছেন না জেলেরা। এ বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে রয়েছে। কীভাবে তাদের সহায়তা করা যায়, তা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।’
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসেই ১৩ বার ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। একই সময়ে রেকর্ড ১ হাজার ৭০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে উপকূলীয় এলাকায়।