মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

ঈদগাঁওয়ে ইউপি সদস্যের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও: কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য দিদারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৬ নং ওয়ার্ডের ভুক্তভোগীরা সোমবার (২ জুন) বিকালে বাঁশঘাটা এলাকায় এ মানবববন্ধনে অংশ নেন। মেম্বারের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অপকর্ম তুলে ধরে তারা অভিযুক্তের মেম্বার পদ বাতিলের দাবীও জানান।

জানা যায়, ভুক্তভোগীরা ইতোপূর্বে কর্মসৃজন প্রকল্পে কাজ করেছেন। তাদের তালিকায় ৫০ জন সদস্য ছিল যাদের ভাতা পাওয়ার সীমকার্ড ও পিনকোড মেম্বার দিদারুল ইসলাম নিজের কাছে রেখে দিতেন। সরকারী ভাতা এলে তিনি কাউকে না জানিয়ে সবার ভাতা উত্তোলন করে ২/৩ শ টাকা হারে বিতরণ করে সমুদয় টাকা নিজে ভোগ করেছেন। ন্যায্য টাকা ও সীমকার্ড ফেরত চাইলে তিনি নানান হুমকি ধামকিসহ কাজ থেকেও বাদ দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। তালিকায় ৫০ জনের নাম থাকলেও মাত্র ২৩ জন কাজে উপস্থিত থাকতেন। কিন্তু মেম্বার সবাইকে উপস্থিত দেখিয়ে সকল টাকা নিজে আত্মসাত করেছেন। এ বিষয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট ভোক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগটি উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা তদন্ত করছেন বলে সূত্র জানায়।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, আমরা আবার সীমকার্ড বানালে মেম্বার আমাদেরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। পরবর্তীতে নতুন কর্মসৃজন তালিকা হলে ন্যায্যতা অনুসরণ না করে তার অনুগতদেরকে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেন যাদের মধ্যে মাত্র ২/৩জন কাজে উপস্থিত থাকেন। অথচ আমরা নিয়মিত কাজে উপস্থিত থাকার রেকর্ড থাকলেও মেম্বার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে আমাদের সবাইকে বাদ দিয়েছেন। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে মেম্বারের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।

সূত্র জানায়, দিদারুল ইসলাম ইসলামাবাদ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি এলাকায় নানা দুর্নীতি, অপকর্ম করলেও সৈরাচারী সরকারের ক্ষমতার অংশীজন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে নানা প্রতিবাদ, সংবাদ হলেও সমাজ কোন ইতিবাচক ফলাফল পায়নি। ২০২০ সালে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ১০ টাকা কেজি মূল্যের চাল কারসাজি করে নিজ ঘরেই তুলে নিয়েছেন তিনি। নিজের স্ত্রী ও ছোটভাইয়ের নাম তালিকায় বসিয়ে তিনি কয়েক দফা চাল উত্তোলন করে ভোগ করেছেন যা সংশ্লিষ্ট তালিকা পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাবে। ২০২১ সালে ডব্লিউএফপি’র কভিড-১৯ জরুরী সহায়তা প্রাপ্তদের প্রায় ৪০ জনের নিকট থেকে ৫০০/১০০০ টাকা করে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন। এমনকি পূর্ব ইউছুপেরখীলে জনৈক সলিমের নিকট থেকে মেম্বার ১ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে এবং জনস্বার্থ বিবেচনা না করে ওই এক পরিবারের চলাচলের জন্য সরকারী ব্রীজ করে দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, মেম্বার দিদারুল ইসলাম একজন চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী। তিনি গ্রামের যুবকদেরকে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে নিজে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তিনি গরুচোর সিন্ডিকেটের চিহ্নিত সক্রিয় সদস্য বলে এলাকায় বহুল প্রচার আছে। তাছাড়া, ভাতার কার্ড দিবে বলে ৫ হাজার টাকা, চাউলের কার্ড দিবে বলে ৩ হাজার টাকা করে নিয়ে আত্মসাত করেছেন। সরকারী ঘর বানিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি অনেকের নিকট থেকে ৪০/৫০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন কিন্তু কোন ঘর পাইয়ে দেননি। বিচারের নামে নেওয়া জমা টাকা তিনি কখনো ফেরত দেননি। যে কোন বিচারে তিনি উভয় পক্ষ থেকে ঘুষ নিয়েছেন এবং কিছুদিন বিচারের নামে তামাশা করে পরবর্তীতে কৌশলে বিচারটি থানায় পাঠিয়ে আরেকদফা হয়রানি করেছেন।

সৈরাচারের একান্ত দোসর মেম্বার দিদারুল ইসলাম বহু মামলার আসামী। তিনি জুলাই আন্দোলনে ঈদগাঁওর প্রতিবাদী জনতার উপর প্রত্যক্ষ আক্রমণকারী। তাকে গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও মেম্বার পদ বাতিলের জন্য প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকার সচেতন জনসাধারণ।