যুক্তরাষ্ট্রের মেরি ই. ব্রাঙ্কো ও ফ্রেড র্যামসডেল এবং জাপানের শিমোন সাকাগুচি এ বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
নোবেল জুরি সোমবার (০৬ অক্টোবর) এ তথ্য জানিয়েছে। তারা ‘পরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’ সম্পর্কিত মৌলিক আবিষ্কারের জন্য এ স্বীকৃতি পেয়েছেন।
নোবেল কমিটি জানিয়েছে, তাদের এই আবিষ্কার নতুন গবেষণাক্ষেত্রের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে এবং ক্যানসার ও অটোইমিউন রোগের মতো জটিল অসুস্থতার চিকিৎসা উদ্ভাবনে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, দেহে বিশেষ এক ধরনের প্রতিরোধক কোষ রয়েছে—রেগুলেটরি টি সেলস, যাদের কাজ হলো আমাদের প্রতিরোধক কোষ যেন নিজের শরীরকেই আক্রমণ না করে, তা নিশ্চিত করা।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ওলে ক্যাম্পে বলেন, ‘তাদের আবিষ্কার আমাদের ইমিউন সিস্টেম কীভাবে কাজ করে এবং কেন সবাই গুরুতর অটোইমিউন রোগে ভুগে না—তা বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’
১৯৯৫ সালে শিমোন সাকাগুচি প্রথমবার দেখান, ইমিউন টলারেন্স কেবল থাইমাসে ক্ষতিকর কোষ ধ্বংস হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি এক নতুন শ্রেণির কোষ আবিষ্কার করেন, যা দেহকে অটোইমিউন রোগ থেকে রক্ষা করে।
২০০১ সালে মেরি ব্রাঙ্কো ও ফ্রেড র্যামসডেল আবিষ্কার করেন, কিছু বিশেষ ধরনের ইঁদুর সহজেই অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হয়, কারণ তাদের ফক্সপি৩ জিনে ত্রুটি থাকে। পরে দেখা যায়, মানুষের ক্ষেত্রেও এই জিনে মিউটেশন হলে ভয়াবহ রোগ আইপেক্স হয়।
এরপর ২০০৩ সালে সাকাগুচি প্রমাণ করেন, ফক্সপি৩ জিন নিয়ন্ত্রণ করে তিনি যে বিশেষ কোষ আবিষ্কার করেছিলেন, তাদের বিকাশ। এই কোষগুলোই রেগুলেটরি টি সেলস নামে পরিচিত, যা অন্য প্রতিরোধক কোষকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
তাদের এই গবেষণা চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। ক্যানসার ও অটোইমিউন রোগের চিকিৎসা, এমনকি সফল অঙ্গ প্রতিস্থাপনেও এই আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে এসব চিকিৎসা পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে।
মেরি ই. ব্রাঙ্কোর জন্ম ১৯৬১ সালে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে ইনস্টিটিউট ফর সিস্টেমস বায়োলজি-তে সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।
ফ্রেড র্যামসডেলের জন্ম ১৯৬০ সালে। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক সোনোমা বায়োথেরাপিউটিকস-এর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা।
শিমোন সাকাগুচির জন্ম ১৯৫১ সালে। ১৯৭৬ সালে এমডি এবং ১৯৮৩ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে ওসাকার ইমিউনোলজি ফ্রন্টিয়ার রিসার্চ সেন্টার, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর হিসেবে কর্মরত।
তারা তিন জন একত্রে ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪ কোটি টাকা) পুরস্কারের অর্থ পাবেন।