মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস ৩০ জুন

ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস আজ ৩০ জুন। ১৮৫৫ সালের এ দিনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের মহাজনি নিয়মনীতি থেকে নিজেদের রক্ষা এবং একটি স্বাধীন-সার্বভৌম সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাঁওতালরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এ দিনটিকে সাঁওতালদের অনেকেই সিধু-কানু দিবস বলে থাকেন।

এদিকে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস পালন উপলক্ষে রবিবার (২৯ জুন) সকাল ১০টায় নওগাঁ জেলা শহরে র‌্যালি ও আলোচনা সভা করেছে ‘জাতীয় আদিবাসী পরিষদ’।

এ ছাড়া সোমবার (৩০ জুন) বেলা ১১টায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বাগদা ফার্মে সমাবেশের আয়োজন করেছে ‘জাতীয় আদিবাসী পরিষদ’।

ইতিহাস থেকে জানা গেছে, ১৮৫৫ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বিহারের ভাগলপুর জেলায় ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন সাঁওতালরা। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন চার ভাই সিধু মুরমু, কানু মুরমু, চাঁদ মুরমু, ভৈরব মুরমু। সঙ্গে ছিলেন তাদেরই দুই বোন ফুলোমনি মুরমু ও ঝালোমনি মুরমু। ওই বছরের ৩০ জুন ভাগলপুরের ভগনা ডিহি গ্রামে ৪০০টি গ্রামের ১০ হাজার সাঁওতাল কৃষক জমায়েত হন। সে জমায়েতে সিধু-কানু ভাষণ দেন। সেদিন সাঁওতাল কৃষকরা শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার শপথ নেন। ভগনা ডিহি গ্রামের ওই সভার শপথ ছিল বিদ্রোহের শপথ। বিদ্রোহের মূলমন্ত্র ছিল ‘জমি চাই, মুক্তি চাই।’

এ জমায়েতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, অত্যাচারী শোষকদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবাইকে এক হয়ে লড়তে হবে। তারা জমির কোনো খাজনা দেবে না।

প্রত্যেকেরই যত খুশি জমি চাষ করার স্বাধীনতা থাকবে। সাঁওতালদের সব ঋণ বাতিল। জমায়েতে তারা ভারতের ভাগলপুর, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলার প্রায় দেড় হাজার বর্গমাইল এলাকাকে দামিন-ই-কোহ্ বা ‘পাহাড়ের ওড়না’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে। সে এলাকা দখল করে তারা নিজেদের রাজ্য গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। ভগনা ডিহি গ্রামের সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈররের নেতৃত্বে দামিন-ই-কোহ্ অঞ্চলে সংঘটিত হয় সাঁওতাল বিদ্রোহ।

সাঁওতালদের সেই সশস্ত্র বিদ্রোহে পরে যোগ দেন আশপাশের এলাকার শোষিত, বঞ্চিত বাঙালি ও বিহারি, হিন্দু-মুসলমান, গরিব কৃষক এবং কারিগররা। এরপর সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়ে ওঠে সব সম্প্রদায়ের জনসাধারণের মুক্তিযুদ্ধ।

যুদ্ধে সাওতাঁলরা তির-ধনুক ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তবে ইংরেজ বাহিনীর আধুনিক বন্দুক ও কামানের কাছে টিকতে পারেননি। ১৮৫৬ সালের নভেম্বর মাসে যুদ্ধ শেষ হয় ও বিদ্রোহের পরিসমাপ্তি হয়। এ যুদ্ধে সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব মুরমু এবং ইংরেজ সৈন্যসহ প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল যোদ্ধা মারা যান।

সাঁওতাল বিদ্রোহের পর ইংরেজ সরকার সাঁওতালদের অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করে। পরে ভাগলপুর ও বীরভূমের কিছু অংশ নিয়ে সাড়ে ৫ হাজার বর্গমাইলজুড়ে প্রথমে দেওঘর ও পরে দুমকায় প্রধান কার্যালয় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। গঠিত হয় সাঁওতাল জেলা। প্রথমে এই জেলার নাম হয় ডুমকা। যেটি পরবর্তী সময়ে সাঁওতাল পরগনা নামে পরিচিত হয়। সাঁওতালদের দেওয়া হয় বিচারিক ক্ষমতা। খাজনা, করের নিয়ন্ত্রণও আসে সাঁওতালদের হাতে।