মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

দুদকে নজরদারি করতে টাস্কফোর্স চায় জামায়াত

দুর্নীতি রোধে কাজ করা প্রতিষ্ঠান দুদক অনেকটা দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা সব মানুষের কাছে চিহ্নিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।

তিনি বলেছেন, আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওপর নজরদারির জন্য জন্য ওয়াচডগের মতো কাজ করবে এমন একটা কাউন্সিল গঠনে প্রস্তাব করেছি। সেখানে একটা টাস্কফোর্স থাকবে। সেই টাস্কফোর্স দুর্নীতির ওপর তদন্ত করবে এবং যারা দোষী তাদের চিহ্নিত করবে। তারা প্রাথমিকভাবে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে পারবে।

রোববার (১৮ সে) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর বৈঠকের মধ্যাহ্নভোজের বিরতির ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন জামায়াতের নায়েবে আমির।

ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আজ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার প্রথম ধাপে বেশ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। দুর্নীতি রোধে কাজ করা প্রতিষ্ঠান দুদক কমিশনের ওপরে আলোচনা হয়েছে। দুদকের ওপরে নজরদারির জন্য ওয়াচডগের মতো কাজ করবে এমন একটা কাউন্সিল গঠনে আমরা প্রস্তাব করেছি। সেখানে একটা টাস্কফোর্স থাকবে। সেই টাস্কফোর্স দুর্নীতির ওপর তদন্ত করবে এবং যারা দোষী তাদের চিহ্নিত করবে। তারা প্রাথমিকভাবে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে পারবে। যদি সে চাকরিজীবী হয় তবে তাকে সাসপেন্ড করা। অর্থাৎ দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপরেই যেন ওয়াচডগের মতো কাউন্সিল বা টাস্কফোর্স থাকে।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে। এ ব্যাপারে কমিশনও সুপারিশ করবে বলে জানিয়েছে।

তাহের বলেন, আমরা আরেকটি বিষয়ে প্রস্তাব করেছি সেটা হচ্ছে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। আমাদের দেশকে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। একজনের হাতে যেন সব ধরনের ক্ষমতা কুক্ষিগত না হয়।

‘আমরা প্রস্তাব করেছি যে, যে কোনো একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি দলের প্রধান থাকতে পারবেন না। অর্থাৎ যিনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন তিনি দলের প্রধান থাকতে পারবেন না, আবার ‍যিনি দলের প্রধান তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।’

এ ধরনের উদাহরণ বহু দেশে আছে উল্লেখ করে তাহের বলেন, আমাদের পাশের দেশ ভারত, সেখানেও এ ধরনের প্র্যাকটিস আছে। সোনিয়া গান্ধী যখন কংগ্রেসের সভাপতি তখন মনমোহন সিং ছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান। আজ যে মোদি সাহেব প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আছেন, তিনি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হলেও দলের প্রধান আরেকজন। অন্যদিকে আমেরিকাতেও যদি দেখেন সেখানকার প্রেসিডেন্ট কিন্তু রিপাবলিকান দলের প্রধান না। সুতরাং সারা দুনিয়াতে ব্যালেন্স অব পাওয়ারটা আছে। আমরা এ প্রস্তাবটা করেছি। যাতে করে একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও পার্টির প্রধান হতে না পারেন।

জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, এর আগের আলোচনায় আমরা বেশ কিছু বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলাম। আজ আমরা আরও বিস্তারিত আলোচনা করেছি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে যে একজন ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। অর্থাৎ দশ বছরের বেশি একজন ব্যক্তি তার পুরো জীবনে প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। এতে করে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি হবে। তিনি এমন কিছু হয়ত করবেন না যা তাকে নিগৃহীত বা জনগণের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের জন্য টাস্কফোর্সে কারা থাকবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে এখনো আমরা বিস্তারিত কিছু বলিনি। যেহেতু এটা প্রশাসনিক বিষয়। আমরা এটা প্রস্তাব করেছি।

তাহের বলেন, আপনারা জানেন গত ১৫ বছর যে নির্বাচন কমিশন ছিল তার মূল দায়িত্ব ছিল সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। কিন্তু তারা সেটা করেনি বা করতে পারেনি। এর কারণ হচ্ছে আমাদের বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনের কমিশনারদের ত্রুটিবিচ্যুতি বা তাদের ভুল-ভ্রান্তির জন্য খুব বেশি শাস্তির কোনো সিস্টেম ছিল না।

তিনি বলেন, আমরা এবার বলেছি নির্বাচন কমিশনারদের চাকরিকালীন সময়ে ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য জুডিশিয়াল কাউন্সিল যেন তদন্ত ও শাস্তি নিশ্চিত করতে পারে। তাদের চাকরির মেয়াদ যখন শেষ হয়ে যাবে বা চাকরি চলে যায় তখন তারা আর আইনের আওতায় থাকেন না। আমরা এবার প্রস্তাব করেছি, আইনের সংশোধনী এনে যেন তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়। ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশন থেকে অবসরে গেলেও তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সেজন্য নির্বাচন কমিশন আইনের সংশোধনী আনা দরকার। এই তিনটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা আজ কথা বলেছি। এই তিনটি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে।

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, আমরা নীতিগতভাবে একমত। তবে যে ফরমেটটা দেওয়া হয়েছে সেখানে কিছু সংশোধনী আমরা এনেছি। মূলত প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপ্রধানকে তারা প্রস্তাব করেছিলেন বোর্ডের ভেতরে রাখার বিষয়ে। আমরা বলেছি, না, তাদের বাইরে রাখতে হবে। কারণ দেশে যদি কোনো ক্রাইসিস তৈরি হয় তাহলে সেটার সমাধানের জন্য মানুষ যাবে কোথায়। এক্ষেত্রে তো সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতি ক্রাইসিস ফেস করবেন। সেজন্যই তাদের আমরা জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের বাইরে রাখতে বলেছি।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত রয়েছেন কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের নেতৃত্বে দলটির পক্ষ থেকে উপস্থিত রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি (ভারপ্রাপ্ত) এ টি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ও বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।